এই শতকে বৈশ্বিক তাপমাত্রা ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধির সম্ভাবনা দুই-তৃতীয়াংশ।
জলবায়ু পরিবর্তন এখন আর কাগজে কলমে বা বিজ্ঞানীদের গবেষণার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। জলবায়ু পরিবর্তন এখন বাস্তবতা। এর বিরুপ প্রভাব পড়ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। দেখা যাচ্ছে কোথাও খরা, কোথাও অতিবন্যা, ঝড়, বৃষ্টি।
আর জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ি মানুষের কার্যকলাপ, গ্রিন হাউজ গ্যাস নিঃসরন। জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পর দায়ি করা হয় মিথেন গ্যাসকে। এই মিথেন গ্যাসের ঘনত্ব বেড়েছে আগের চেয়ে অনেক দ্রুত। গ্লোবাল কার্বন গ্রজেক্ট তার গবেষণায় দেখিয়েছে গেলো দুই দশকে মিথেন গ্যাস নিঃসরন বেড়েছে ২০ শতাংশ। আর এই বৃদ্ধির অন্যতম কারণ কয়লা খনি খনন, তেল ও গ্যাসের উৎপাদন এবং ব্যবহার বৃদ্ধি। এছাড়া গবাদি পশু ও পচনশীল খাদ্যসামগ্রী থেকেও তৈরী হচ্ছে মিথেন।
মানুষের কার্যকলাপে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বায়ুমন্ডল, সাগরে এসেছে পরিবর্তন। ২০২৩ সাল ছিলো সবচেয়ে উষ্ণ বছর, আর এই ধারা অব্যাহত ছিলো ২০২৪ সালের প্রথমার্ধেও।
ইউনাইটেড ইন সায়েন্স জানাচ্ছে, ২০২১ থেকে ২০২২ পর্যন্ত বিশ্বে গ্রিন হাউজ গ্যাসের নিঃসরণ বেড়েছে ১.২ শতাংশ, যা ৫৭.৪ বিলিয়ন টন কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণের সমান।
যখন প্যারিস চুক্তি গ্রহণ করা হয়, তখন অনুমান করা হয়েছিলো ২০৩০ সাল নাগাদ গ্রিন হাউজ গ্যাস নিঃসরণ হবে ২০১৫ সালের তুলনায় ১৬ শতাংশ। কিন্তু আশার কথা এখন পর্যন্ত এটি বৃদ্ধি পেয়েছে মাত্র ৩ শতাংশ। তবে গ্রিন হাউজ গ্যাস নিঃসরণ রোধে কাজ করতে হবে আরো। যদি বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ২ ডিগ্রি বা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের (প্রাক-শিল্প যুগের তুলনায়) মধ্যে রাখতে হয় এবং বর্তমান নীতি ঠিক থাকে তাহলে গ্রিন হাউজ গ্যাস নিঃসরণ ২০৩০ সাল নাগাদ কমাতে হবে ২৮% এবং ৪২%।
বর্তমান নীতি এবং এনডিসি অনুযায়ি অনুমান করা যায় এই শতাব্দীতে বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধি সবোর্চ্চ ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখা যাবে। তবে শর্তযুক্ত এনডিসি এবং নেট-জিরো প্রতিশ্রুতি যদি রক্ষা করা যায় তাহলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখা সম্ভব। তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের রাখার সম্ভাবনা মাত্র ১৪%। বর্তমানে পৃথিবীর ভূ-পৃষ্ঠের গড় তাপমাত্র ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
ইউনাইটেড ইন সায়েন্স বলছে, আশি শতাংশ সম্ভাবনা আছে আগামী ৫ বছরের যেকোন এক বছরে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ( প্রাক-শিল্প যুগের) চেয়ে তাপমাত্রা বেশি বৃদ্ধি পাবে। আর এই ৫ বছর ধরা হয়েছে ২০২৪ থেকে ২০২৮ সাল। এছাড়া বিশ্বের ৬টি দেশের মধ্যে ১টি দেশে জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা ও তহবিলের ঘাটতি রয়েছে। তাই অভিযোজন এবং প্রশমন পরিকল্পনা জরুরী বলে মত দিয়েছে ইউনাইটেড ইন সায়েন্স।
আন্তর্জাতিক চ্যারিটি সংস্থা অ্যাকশন এইড বলছে, বছরে ৬৫০ বিলিয়ন ডলারের বেশি জীবাশ্ম জ্বালানী কোম্পানিকে ভর্তুকি দেয়া হচ্ছে। আর এই ভর্তুকি গ্রিন হাউজ গ্যাস নিঃসরণকে উৎসাহিত করছে। উন্নত দেশগুলো এই ভর্তুকি দানে উৎসাহ দিচ্ছে। যেমন বৃটেন প্রতিবছর ৭.৩ বিলিয়ন ডলার জীবাশ্ম জ্বালানী খাতে ভর্তুকি দেয়।
এমন বাস্তবতায় নভেম্বরে আজারবাইজানে শুরু হতে যাচ্ছে কনফারেন্স অব পার্টিজের ২৯তম আসর। যেখানে উপস্থিত থাকবেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র, সরকার প্রধানসহ নীতি নির্ধারকরা। এবারের আলোচনার অন্যতম বিষয় জলবায়ু তহবিল।
কিন্তু তহবিলের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া উচিত, যেসব কারণে জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে সেটি রোধে পদক্ষেপ নেয়া, বেশি কার্বন ও মিথেন নিঃসরণ দেশগুলোকে একটি জবাবদিহিতার মধ্যে নিয়ে আসা।